চোখ – বাংলা হরর উপন্যাস – মোঃ জিয়াউর রহমান

চোখ – বাংলা হরর উপন্যাস
সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে রচিত
মোঃ জিয়াউর রহমান
গভীর রাতে কোনো কারণ ছাড়াই আবিরের ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ করে। জানালার ফাঁক দিয়ে স্ট্রিট লাইটের ক্ষীণ আলো প্রবেশ করে কেমন একধরনের ভূতুড়ে আবেশ তৈরি করেছে। বুক ধড়ফড় করছে, মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে চাপা আর ভারী কিছু জেঁকে বসেছে। বিছানায় উঠে বসলো সে। ঘেমে সারা শরীর একেবারে ভিজে গেছে। ইদানীং প্রায়ই এমনটি ঘটছে তার সাথে। এমন অবস্থায় ব্রেন ফগের মতো একটা অনুভূতি হয়, মনে হয় মাথার ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা আর শূন্য। টেবিল ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে ভোর চারটা দশ। দূর থেকে কুকুরের ডাক ভেসে আসছে, বনশ্রীর এই এলাকাটায় কুকুরের উপদ্রব অনেক বেড়ে গেছে ইদানীং। বাকি সময়টা না ঘুমিয়েই কাটাতে হবে।
আবির চোখ বন্ধ অবস্থায় টেবিলের উপর রাখা পানির বোতলটার দিকে হাত বাড়াল – বোতলে কোন পানি নেই, প্রচন্ড তৃষ্ণা পাচ্ছে কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে – ঘুমাতে যাবার আগেই চেক করে দেখার দরকার ছিল বোতলে পানি আছে কিনা! পৃথিবীতে যত ধরনের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা আছে তার যদি কোন গ্রেডিং ব্যবস্থা থাকতো তাহলে নির্ঘুম রাত কাটানোর যন্ত্রণা নিঃসন্দেহে একেবারে উপরের দিকে থাকতো, মনে মনে ভাবল আবির। প্রতিটি মিনিট মনে হচ্ছে যেন অনন্তকাল, চোখের পাতা ক্লান্তিতে ভারী হয়ে আছে। ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে কিন্তু প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম রুমের মধ্যে, দক্ষিণের জানালাটা বন্ধ, কপাটের ফাঁক দিয়ে ক্ষীণ আলো ঢুকছে। কপাটগুলো পুরোপুরি খুলে দিলে বাইরের নির্মল বাতাস ভিতরে প্রবেশ করতো কিন্তু উঠার মতো শক্তি বা ইচ্ছা কোনটাই নেই। যে কাজটা করলে নির্ঘুম ক্লান্তির যন্ত্রণা দ্বিগুণ বাড়বে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই কাজটাই করলো আবির – হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা নিল। প্রতিবারই সেল ফোন হাতে নিলে মনে হয় যেন দুনিয়ার সকল গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ তার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু বাস্তবে কখনই তেমনটি ঘটেনি। তারপরও প্রতিবারই কেন যেন মনে হয় কোন না কোন গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল বা বার্তা তার জন্য অপেক্ষা করছে – কেন এমন মনে হয় তার কোন ব্যাখ্যা নেই আবিরের কাছে।